সামুয়েল বেকেটের ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett বাংলা আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম– যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ একটা দৃশ্য দিয়ে শুরু হয় এবং এই একটা কাহিনীর উপর নির্ভর করেই সংলাপ আগায় এবং এই একটামাত্র কাহিনী শেষ হতে হতেই নাটক শেষ হয়ে যায়।
ব্যাকেট মূলত এক বা দুই অঙ্কের মধ্যেই নাটক শেষ করেন, যেমন Endgame – এক অঙ্ক, Waiting For godot দুই অঙ্ক। নাটকের অঙ্ক হলো নাটকের বিভাজন, যা গল্পের বিভিন্ন ধাপ বা অংশকে আলাদা করে। একটি নাটকে কতগুলো অঙ্ক থাকবে তা নির্ধারণ করে নাট্যকার।
নাটকের মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে, একটু স্যামুয়েল ব্যাকেট নিয়ে বলে নেয়া যাক। ব্যাকেট আইরিশ নাট্যকার। তিনি তার নাটকের মাধ্যমে থিয়েটার অব এবসার্ড’কে একদম সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিয়ে আসেন, এবং মানুষ এটা গ্রহণ করতে শুরু করেন। মূলত ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষকে এতটা গ্রাস করেছিলো যে, মানুষের মনের মধ্যে সাধারণ কমেডি অথবা গতানুগতিক রোমান্স গল্প/নাটকগুলো খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছিলো না। সাধারণভাবেই যুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষের মনে বিষণ্ণতার স্থায়ী ছাপ গিয়েছিলো; তখন সাহিত্যিকেরা এবসার্ডিজমের চর্চাকে আরও একটু জোরেশোরে শুরু করেন; কেননা- মানুষ তখন যেন এমন কিছু একটাই চাচ্ছিলো সাহিত্যে যা জীবনকে ধাতস্থ করে নিতে এবং জীবনের এই অসাড়তা ও অপারগতার সাথে একটু মানিয়ে নিয়ে সহায়তা করবে।
এন্ডগেম নাটকটি স্যামুয়েল ব্যাকেট প্রথমে ফরাসি ভাষায় ফিন ডি পার্টি – Fin de partie হিসাবে লিখেন এবং ১৯৫৭ সালে প্রযোজনা ও প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি ব্যাকেট নিজেই ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এই নাটকটি ব্যাকেটের “ট্রিলজি” (“Trilogy”) নামক তিনটি নাটকের তৃতীয় এবং শেষ নাটক। “ট্রিলজি”-র অন্যান্য দুটি নাটক হল “ওয়েটিং ফর গডো” (“Waiting for Godot”) (১৯৫২) এবং “ম্যাল্লাপে” (“Mallapute”) (১৯৪৪)।
এন্ডগেম নাটকের চরিত্র:
এবার ব্যাকেটের এন্ডগেম নাটকের চরিত্রগুলো নিয়ে একটু আলাপ করা যাক। এই নাটকে সব চরিত্র মোটামুটি এবসার্ড। এন্ডগেমে মোট চারটি চরিত্র রয়েছে + একটি স্টাফ ডগ।
- হ্যাম – একজন অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মাঝ বয়সের কিছুটা বেশি বয়সে।
- ক্লোভ – বয়স কিছুটা কম, হ্যামের সেবক ও সার্ভেন্ট।
- ন্যাগ – হ্যামের বাবা, ডাস্টবিনের মধ্যে বসবাস করেন।
- নীল – হ্যামের মা, ডাস্টবিনের মধ্যে বসবাস করেন।
- একটা তিন পা ওয়ালা কালো রঙ এর পুতুল কুকুর।
এখানে চরিত্রগুলো নিয়ে একটু বলে নেয়া যাক।
হ্যাম, সে মোটামুটি এই নাটকের লিড। সে একটা চেয়ারে বসে থাকে সারাক্ষণ। চেয়ার থেকে উঠে সে দাড়াতে পারে না। এবং সে অন্ধ; সে তার পাপেট ডগ এর রঙ কালো নাকি সাদা সেটা যে বুঝতে পারে না; তার গালের উপর আলো এসে পড়লো নাকি পড়লো না; সেটাও যে বুঝতে পারে না। মূলত এই হ্যাম চরিত্রটি দিয়ে ব্যাকেট এখানে বুঝাতে চেয়েছেন যে- একজন মানুষ যার মোটামুটি ক্ষমতা আছে, তার সারভেন্ট আছে, তার উপর নির্ভরশীল বৃদ্ধ বাবা ও মা আছে। কিন্তু তার নিজের অন্ধ থাকা, উঠে দাঁড়ানোর অক্ষমতা; এসব যেন মানুষের ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়াওই ইঙ্গিত।
ক্লোভ; মূলত একজন দাস বা সহকারী চরিত্র। তিনি হাঁটতে পারেন, চলতে পারেন, কাজ করতে পারেন; মই দিয়ে উঠে জানালা বন্ধ ও খুলতে পারেন। কিন্তু ইনি আবার বসতে পারেন না। ওনাকে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যা কিনা প্রকাশ করে যে- চরিত্রটি মূলত নিজের ইচ্ছেয় স্বাধীন নয়; অন্য কারও উপর নির্ভরশীল ও স্বাধীন সে নয়। সে একটু পর পর বলে যে, সে হ্যাম কে ছেড়ে চলে যাবে; কেননা হ্যাম কে সাহায্য করতে করতে আর আদেশ নিতে নিতে যে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ; কিন্তু সে হ্যাম কে ছেড়ে যায় না।
নীল ও ন্যাগ; এরা হ্যামএর বাবা ও মা; এরা দুইটা ডাস্টবিনের মধ্যে বাস করে। একটু পর পর ডাস্টবিন থেকে মাথা তুলে দুজন কিছুক্ষণ পুরানো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে, একটা বিস্কিট দুজনে ভাগাভাগি করে খায়; আর জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলে। এরা দুজনই হ্যামের উপর নির্ভরশীল। হ্যাম এদেরকে ডাস্টবিনের মধ্যে থাকতে দিয়েছে। এরা দুজনই তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও চরিত্র না; এদের কোনো প্রভাব তেমন নেই মূল নাটকে- কিন্তু এদেরকে উপেক্ষা করে যাওয়া যায় না। এরা মূলত পরিবেশের একটা অংশ।
‘এন্ডগেম’ থিয়েটার অফ এবসার্ড:
সামুয়েল ব্যাকেটের নাটক “এন্ডগেম” (Endgame) বিংশ শতাব্দীর অ্যাবসার্ড নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এই নাটকটি নিরর্থকতার থিয়েটারের (Theatre of the Absurd) মূলনীতিগুলোকে তুলে ধরে, অস্তিত্ববাদী দর্শনের বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরে। “এন্ডগেম” বিশ্ব সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি অসম্ভব থিয়েটারের একটি ক্লাসিক উদাহরণ, এবং এটি অস্তিত্ববাদের প্রধান থিমগুলি অন্বেষণ করে।
ইতিহাস:
“এন্ডগেম” ১৯৫৭ সালে প্যারিসে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকটি সমালোচক এবং দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। কিছু লোক এটিকে একটি অসহ্য এবং অর্থহীন নাটক হিসেবে মনে করেছিল, অন্যরা এটিকে একটি অভিনব এবং চিন্তা-উদ্দীপক কাজ হিসেবে প্রশংসা করেছিল। “এন্ডগেম” বিশ্বব্যাপী অনেকবার মঞ্চস্থ হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। এটি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন উপযোগ-করণেরও ভিত্তি হয়েছে। “এন্ডগেম” বিশ্ব নাট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এটি অস্তিত্ববাদী থিয়েটারের একটি প্রভাবশালী উদাহরণ, এবং এটি আজও প্রযোজ্য এবং চিন্তা-উদ্দীপক থিমগুলি অন্বেষণ করে।
প্লট ও পটভূমি:
নাটকটি একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত পৃথিবীর একটি নিরালা, একক কামরায় ঘটে। এই কামরায় ২ টা ছোট জানালা আছে। একটা জানালা দিয়ে আকাশ দেয়া যায় আরেকটা জানালা খুলে দিলে সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়। একটু পর পর ক্লোভ মই দিয়ে উঠে জানালা খুলে দেয়। আবার বন্ধ করে দেয়। এরকম একটা নিরিবিলি ঘরেই নাটকের মূল কাহিনী আবর্তিত হয়।
হ্যাম চেয়ারে বসে থাকে সারাক্ষণ, ক্লোভ কিছুক্ষণ পর পর এসে হ্যাম কে এটা সেটা করে দিয়ে যায়। হ্যাম ক্লোভ কে বলে, সে যদি এটা সেটা না করে, যদি সে হ্যামের কথা না শুনে- তাহলে সে ক্লোভ কে খেতে দেবে না। তখন ক্লোভ বলে, খেতে না দিলে তো ক্লোভ মারা যাবে। হ্যাম তাই বলে, ঠিক আছে ক্লোভ কে সে রোজ একটা করে বিস্কিট দেবে যেন সে বেঁচে থাকে।
ক্লোভ একটু পর পর বিরক্ত, ত্যক্ত আর অতিষ্ঠ হয়ে হ্যাম কে বলে যে- সে হ্যাম কে ছেড়ে চলে যাবে। কোথায় যাবে সে এটা জানে না। কিন্তু সে কখনোই হ্যাম কে ছেড়ে যায় না। আরও দেখা যায় যে, হ্যামের খুব ব্যথা শরীরে- তাই তার পেইন কিলার দরকার। সে কিছুক্ষণ পর পর ক্লোভকে জিজ্ঞেস করে যে- এখন কি তার পেইন কিলার নেয়ার সময় হয়েছে? উত্তরে- সবসময়েই ক্লোভ উত্তর দেয় যে- না এখনো পেইন কিলারের সময় হয় নি, আরও পরে।
এরকম অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরে, একটা পর্যায়ে ক্লোভ বলে যে- হ্যাঁ, এখন সময় হয়েছে হ্যামের পেইন কিলার নেয়ার। তখন হ্যাম ক্লোভ’কে বলে পেইন কিলার দিতে। উত্তরে ক্লোভ বলে, এখন পেইন কিলার নেয়ার উপযুক্ত সময়; কিন্তু তাদের কাছে কোনও পেইন কিলার নেই।
কিছুক্ষণ পর পর ডাস্টবিনের মধ্য থেকে নীল এবং ন্যাগ উকি দিয়ে উঠে এটা সেটা নিয়ে কথা বলে। তাদের কথার তেমন কোনো গুরুত্ব হ্যামের কাছে নেই। তারা কিছু জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলে, লাইফের এবসার্ড ফিলিংস নিয়ে একজন আরেকজন কে কথা বলে। আমরা একটু পরে হ্যাম, ক্লোভ, নীল ও ন্যাগের চমৎকার কিছু সংলাপের কথা পড়ব।
একজন আরেকজনকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা, অর্থহীন অতীতের স্মরণ, পেইন-কিলার না পাওয়ার তৃষ্ণা, জানালা দিয়ে দূরের সমুদ্র শোনার চেষ্টা, বৃদ্ধ বাবা-মা’কে কটাক্ষ করা, অথর্বের মতন চেয়ারে বসে থাকা- ইত্যাদি নানাবিধ অসাড়তা নিয়েই আগায় নাটকের সংলাপ ও টাইমলাইন। এই নাটকের নামের মধ্যেই এর মূল-কাহিনীর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এন্ডগেম; অর্থাৎ কোনো ঘটনা, ইভেন্ট, জীবন, এমনকি পৃথিবীর সবকিছুরই সমাপ্তি কীভাবে হবে, এই সমস্ত সমাপ্তি নিয়ে মানব মনে যত ভয়, উদ্বেগ ও শঙ্কা; এসব কিছু মেনে নিয়ে এবং সমাপ্তি না জেনেও কিছু কিছু জীবন শেষ করা যায়।
অন্যদিক দিয়ে দেখলে- এটি স্যামুয়েল ব্যাকেটের ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ নাট্য-ট্রিলজির একটা গুরুত্বপূর্ণ নাটক। ওয়েটিং ফর গোডো তে আমরা দেখেছি কীভাবে আমরা অপেক্ষা করছি। কিসের জন্য অপেক্ষা করছি এসব না জেনেও যেমন অপেক্ষা করা যায়; তেমনি সমাপ্তি না জেনেও যেমন অনেক কিছুই শেষ করা যায়; এবং শেষ বলে যে কিছুই আদৌ নেই; এসব নিয়েই মূলত এন্ডগেম। আবার এও বলা যায় যে- ওয়েটিং ফর গোডো’তে তে আমরা ওয়েটিং এর সমাপ্তি কীভাবে বা কী ভেবে টানবো সেটা নিয়েও হয়ত ব্যাকেট কিছুটা ইঙ্গিত দিলেন এই এন্ডগেম নাটকে।
হ্যাম, ক্লোভ যেন একই কাজ, একই কথা, একই সংলাপ বারংবার বলে যায়, আঊড়ে যায়। যেন তাদের জীবন আটকে আছে এই পৃথিবীর কোনো এক কক্ষে, তাদের কাছে আসে না সমুদ্রের জলের গন্ধ; তারা দেখতে পায় না সূর্যের আলো। মূলত তারা সবাই একটা কিছু সমাপ্তির জন্য অপেক্ষা করছে। আবার এই সমাপ্তি নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো নেই; নেই কোনো চিন্তাভাবনা। তারা কেউ জানেও না সমাপ্তি হলেই বা কী হবে- কিংবা শেষ হয়ে গেলে তারা কে কোথায় যাবে! আদৌ যেতে হবেই কিনা। এসব নানাবিধ এবসার্ডজিম নিয়ে নাটক আগাতে থাকে। নাটকটি মূলত পাঠক/দর্শক’কে ভাবাতে শুরু করবে। কী ভাবাতে শুরু করবে সেটা পাঠক থেকে পাঠকের কাছে বদলে যাবে। ব্যাকেট তার নিজস্ব ব্যাকেটীয় স্টাইলে একটা ছোট্ট ঘরে অল্প ক’জন লোক নিয়ে যেমন নাটকটি শুরু করেছেন; শেষটাও যেন তেমনই- এখানে পাঠক যতটা চিন্তাশীল- ততই যেন নাটকের শেষটা ইন্টারেস্টিং হতে থাকে। থাকবে।
অনেক কাহিনী, সংলাপ, ও অসঙ্গতির পরে ধীরে ধীরে নাটকটি সমাপ্তির দিকে আগায়; পাঠক যারা ব্যাকেটের লেখার স্টাইলের সাথে পূর্বপরিচিত তারা হয়ত শেষ বলে কিছু নেই এটা মেনেই শেষের পাতাগুলো পড়তে যাবেন। কেননা- ব্যাকেট এখানে ধীরে ধীরে সমাপ্তি টানেন। দেখা যায় যে, নাটকে বারবার যে ক্লোভ বলে আসছিলো যে- সে হ্যাম কে ছেড়ে চলে যাবে; সেও সারা নাটকে না গেলেও; শেষে এসে সেও চলে যাওয়ার মত কিছু একটা করে। হ্যাম, ক্লোভ, নীল, ও ন্যাগ এরা ঠিক যেভাবে ছিল নাটক সূচনার দিকে- ঠিক তেমনই এরা থেকে যায় সবাই- মূলত কিছুই হয় না। তবুও সবকিছু আগের মতই রেখে- এমন কিছু একটা হয় যে- নাটকটি শেষ হয়ে যায়।
বিষয়বস্তু:
নিরর্থকতা (The Absurd): নাটকটি অর্থহীন কাজ, খণ্ডিত সংলাপ এবং কালো কৌতুকের মাধ্যমে নিরর্থকতার থিয়েটারের ধারণাকে ফুটিয়ে তোলে। এটি বিধ্বস্ত পৃথিবীর এই অস্তিত্বের নিরর্থকতাকে তুলে ধরে। নাটকটি হ্যাম এবং ক্লোভের মধ্যে কথোপকথন দ্বারা চালিত হয়, যারা তাদের অস্তিত্বের অর্থ-হীনতা এবং অসহায়ত্ব নিয়ে ভাবনা করে। তারা জীবনের শেষের জন্য অপেক্ষা করে, যা অবশ্যম্ভাবী কিন্তু কখনই আসে না.
“এন্ডগেম” বিভিন্ন বিষয় অন্বেষণ করে, যার মধ্যে রয়েছে:
- অস্তিত্ববাদ: নাটকটি জীবনের অর্থ এবং উদ্দেশ্যের প্রশ্নগুলি তুলে ধরে। হ্যাম এবং ক্লোভের জীবন অর্থহীন এবং অসহায় বলে মনে হয়, এবং তারা একটি নিরর্থক বিশ্বে তাদের স্থান খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে।
- অসহায়তা: হ্যাম এবং ক্লোভ উভয়েই শারীরিকভাবে অসহায়। হ্যাম অন্ধ এবং অচল, এবং ক্লোভ অসুস্থ এবং দুর্বল। তাদের নিজেদের জন্য যত্ন নেওয়ার ক্ষমতা নেই এবং তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
- সময়: নাটকটি সময়ের ধারণার সাথে খেলে। হ্যাম এবং ক্লোভ মনে করেন যে সময় থেমে গেছে, এবং তারা একটি অসীম অপেক্ষার মধ্যে আটকে আছে।
- নাটকীয়তা: “এন্ডগেম” একটি অস্বাভাবিক এবং বিরক্তিকর নাটক। এটিতে কমপক্ষে চরিত্র এবং প্লট রয়েছে, এবং এর ভাষা প্রায়শই অস্পষ্ট এবং বিমূর্ত।
- অস্তিত্ববাদী হতাশা (Existential Despair): চরিত্রগুলো তাদের অস্তিত্বের নিরর্থকতার সাথে লড়াই করে, একটি অনিশ্চিত “শেষ” এর মুখোমুখি হয়, যেটি মৃত্যু বা কেবল তাদের সম্পর্কের অবসান হতে পারে।
- স্মৃতি ও সময় (Memory and Time): চরিত্রগুলো অতীতের টুকটুক স্মৃতিতে আঁকড়ে থাকে, যা সম্ভবত সুখী অতীতের একটি ঝলক দেয়। সময় নিজেই একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তাদেরকে অনিবার্য শেষের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
- নির্ভরতা ও ক্ষমতার লড়াই (Dependency and Power Struggles): হাম মৌলিক চাহিদাগুলির জন্য ক্লোভের উপর নির্ভর করে, তবুও তাকে নির্যাতন করে। ন্যাগ ও নীল একে অপরের উপর নির্ভরশীল, তবুও তারা ক্রমাগত ঝগড়া করে। এই গতিবিধিগুলি নিঃশব্দতার মুখেও মানবিক নির্ভরতা এবং নিয়ন্ত্রণের লড়াইকে তুলে ধরে।
প্রতীক:
ব্যাকেটের এই এন্ডগেম নাটকটি কিছু প্রতীক আমাদের কাছে তুলে ধরে। এক নজরে দেখে নেয়া যাক অল্প কিছু —
- এন্ডগেম (The Endgame): শিরোনামটি নিজেই একটি খেলার শেষ প্যাঁচকে নির্দেশ করে, সম্ভবত খেলা, চরিত্রগুলির আসন্ন মৃত্যুর একটি প্রতিফলন।
- শারীরিক অক্ষমতা: ( The Physical Issues): হ্যাম, ক্লোভ, নীল ও ন্যাগ সকলেই কিছু না কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। যা মূলত মানুষের ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়াকে ইঙ্গিত করে।
- ডাস্টবিন (The Bins): ন্যাগ ও নীলের ডাস্টবিন বার্ধক্যের আবদ্ধতা এবং ক্ষয়কে উপস্থাপন করে।
- জানালা (The Window): একetlen জানালাটি বিধ্বস্ত বাইরের জগতের একটি ঝলক দেয়, বিপর্যয়ের একটি ধ্রুব স্মারক।
গুরুত্বপূর্ণ বাণী:
1) “The end is in the beginning and yet you go on.”
2) “Nothing is funnier than unhappiness.”
3)
NAGG: Can you hear me?
NELL: Yes. And you?
NAGG: Yes. (Pause.) Our hearing hasn’t failed.
NELL: Our what?
NAGG: Our hearing.
4)
HAMM: Is it not time for my pain-killer?
CLOV: Yes.
HAMM: Ah! At last! Give it to me! Quick!
(Pause.)
CLOV: There’s no more pain-killer.
(Pause.)
HAMM (appalled): Good…!
(Pause.) No more pain-killer!
5) “I use the words you taught me. If they don’t mean anything anymore, teach me others. Or let me be silent.”
6) “Finished, it’s finished, nearly finished, it must be nearly finished. Grain upon grain, one by one, and one day, suddenly, there’s a heap, the impossible heap.”
7) “We’re not beginning to… to… mean something?” “Mean something! You and I, mean something! (Brief laugh.)“
8) “Use your head, can’t you, use your head, you’re on earth, there’s no cure for that!”
9)
HAMM: What’s he doing?
CLOV: Sucking his biscuit.
HAMM: Life goes on.
সমালোচনা:
“এন্ডগেম” বিশ্ব সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি অসম্ভব থিয়েটারের একটি ক্লাসিক উদাহরণ, এবং এটি অস্তিত্ববাদের প্রধান থিমগুলি অন্বেষণ করে। নাটকটি সমালোচকদের দ্বারা এর অস্বাভাবিকতা এবং বিরক্তিকরতার জন্য প্রশংসিত হয়েছে, যা এটিকে একটি শক্তিশালী এবং চিন্তা-উদ্দীপক নাটক করে তোলে। ব্যাকেটের নাটক সব ধরণের পাঠক কিংবা দর্শকের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না; পাওয়ার কথা না। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এবসার্ডিজমের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকলে সত্যিই সবকিছু অচল হয়ে যেতো। যেমনটা দেখা গেছে ব্যাকেটের ওয়েটিং ফর গডো’র বেলায়- দুটি পৃথক থিয়েটারে নাটকটি দেখানর পর একদল মানুষ নাটকটি দেখে – নাটকের কাছে নিজেকে এতটাই কানেক্ট করতে পেরেছেন যে- তারা সবাই নিজ নিজ অস্তিত্বের দ্বিধায় পড়ে যান এবং নাটকটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। অন্যদিকে- একদল মানুষ নাটকটির মধ্যে কোনো কাহিনী, সংলাপ, ঘটনা না বুঝতে পেরে- এটি একটি যাচ্ছে তাই সময়ের অপচয় বলে থিয়েটার থেকে বের হয়েছেন।
স্যামুয়েল ব্যাকেটের এন্ডগেম নাটকটিও একই ধরণের- এই নাটকের সঠিক মূল্যায়ন কেবল লেখক/নাট্যকারের লেখনশৈলীর উপরে নির্ভর করে না। পাঠকের সাথে এর ইন্টারপ্রেটেশন খুবই জরুরী এর সার্থকতা বিচারের জন্য।
অস্তিত্ববাদী নাট্যের অনুপ্রেরণা; “এন্ডগেম” বাংলা নাটকে অস্তিত্ববাদী ধারার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। হ্যাম এবং ক্লোভের অস্তিত্বের অর্থ-হীনতা ও অসহায়তার চিত্রণ বাংলা নাট্যকারদের অনুপ্রাণিত করে তাদের নিজস্ব রচনায় জীবনের অন্ধকার দিকগুলি অন্বেষণ করতে। অস্বাভাবিক থিয়েটারের প্রচলন; “এন্ডগেম”-এর অস্বাভাবিক থিয়েটারের ধারণাও বাংলা নাট্যকে প্রভাবিত করেছে। ব্যাকেটের নাটকের অস্পষ্ট ভাষা এবং অমূর্ত প্রতীক বাংলা নাট্যকারদের অনুপ্রাণিত করে তাদের নিজস্ব রচনায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এবং ঐতিহ্যবাহী নাট্য রীতির সীমানা ছাড়িয়ে যেতে।
কিছু উল্লেখযোগ্য মঞ্চস্থতা:
- ১৯৫৭: থিয়েট্রে দ্য ল’অ্যাটেলিও, প্যারিস, ফ্রান্স
- ১৯৬১: বিউথ থিয়েটার, লন্ডন, ইংল্যান্ড
- ১৯৬৮: থিয়েট্রে ডে লাভিল, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
- ১৯৮০: গেটি থিয়েটার, লস অ্যাঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
- ২০০০: ন্যাশনাল থিয়েটার, লন্ডন, ইংল্যান্ড
- ২০০৮: ব্রুকলিন একাডেমি অফ মিউজিক, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ফুটনোট:
“এন্ডগেম” কেবল একটি নাটক নয়, এটি একটি দর্শন। নাট্যকাররা ব্যাকেটের এই অসাধারণ রচনার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন এবং সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। “এন্ডগেম”-এর প্রভাব আজও অনুভূত হয়, এবং এটি ভবিষ্যতের প্রজন্মের লেখকদের অনুপ্রাণিত করতে থাকবে বলে আশা করা যায়।
আমি নিজে কোনোভাবেই সাহিত্য, লিটারেচার, কিংবা থিয়েটারের সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত নই। স্যামুয়েল ব্যাকেটের লেখা ভালো লাগে, নিজে ওর সাথে কানেক্ট করতে পারি কিছুটা বলেই, এত এতটা খাটা-খাটুনি করে এত বিশাল ব্লগ পোষ্টের অবতারণা। আমার এই পোষ্টের ভুল, ত্রুটি, মার্জনা ও শুধরে দেয়ার নিমিত্তে কেউ কিছু জানালে ভীষণ আপ্লুত হবো। আমাকে মেইল করতে পারেন আপনার নিজের জীবনের সাথে থিয়েটার অব এবসার্ডের মেলবন্ধন। আমাকে লিখতে চাইলে লিখতে পারবেন jahid@journalofjahid.com এই মেইল ঠিকানায়।
ধন্যবাদ
২৬শে মে, ২০২৪