একটুখানি সিসিফাস — এবসার্ডিজম – শশবিষান ও অন্যান্য
আলবেয়ার কামুসের দুইটা লেখা আমাকে ভীষণভাবে বিমোহিত করে। একটা হলো The Outsider আরেকটা হলো The Myth Of Sisyphus. দুইটা বই’ই জীবনের অযৌক্তিকতা, অর্থহীনতা, আর শশবিষান নিয়ে কথাবার্তা।
কামুসের লেখায় absurdity বিষয়টা খুব জোড়ালো-ভাবে দেখা যায়। আমার মনে হয় না যে, কামুস এসব নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে লিখেছেন। মনে হয়েছে যে জীবনের প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে তিনি এসব অনুভব করেছেন বলেই এই ভাবনা চিন্তাগুলো ওনার মধ্যে এইভাবে এত প্রকটভাবে ধরা দিয়েছে।
১) দ্য আউটসাইডারঃ এবসার্ডিজমের সূচনা
কামুসের এই লেখাগুলো আমাদেরকে জীবনকে বুঝতে যতটা না সাহায্য করে, তারচেয়ে বেশি সাহায্য করে জীবনের অসঙ্গতিগুলোকে বুঝতে বা অনুভব করতে যে- হ্যাঁ এরকমও হতে পারে। যেমন, ধরা যাক; আপনি কোনও কাজের জন্য অনেকদিন ধরে মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আপনি খুবই কনফিডেন্ট ব্যাপারটা নিয়ে যে কাজটা আপনার হয়ে যাবেই। এবং আপনি এও জানেন যে, আপনি যতটা না চাচ্ছেন যে কাজটা হয়ে যাক, কাজটাও অনেকটা মনে মনে চায় যে- সে আপনার হাতেই এসে হয়ে যাক। অনেকটা ঐ রুমির লাইনের মতন
– “Not only the thirsty seek the water, the water as well seeks the thirsty.”
উভয়পক্ষের এতটা একাগ্রতা আর তীব্রতা থাকা সত্ত্বেও যখন দেখতে পাবেন যে- হলো না আসলে; কাজটা হলো না। কোনও কারণে আপনার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে- তখন আসলে আপনার কোনও সহানুভূতির হাত দরকার হয় না। কারণ সহানুভূতিকে সহানুভূতিসহ গ্রহণ করার জন্য অনেকটা শক্ত নিজেকে হতে হয়। কিন্তু হয়ত ঠিক তক্ষুনি আপনি অতটা শক্ত নন। তখন আমার মনে হয় আপনার সহানুভূতির দরকার না। আপনার দরকার হবে কেউ আপনাকে কিছু উদাহরণ ও বিশ্লেষণ সহকারে দেখিয়ে দিক যে পৃথিবীটা আসলেই খুব শক্ত আর রূঢ়। এখানেই আসে জীবনের অযৌক্তিকতা, অর্থ-হীনতা, আর শশবিষান, absurdity নিয়ে কথাবার্তা।
কামুস এই ব্যাপারগুলো তার লেখায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। যদি কামুসের দ্যা আউটসাইডার নিয়ে একটু বলি- এটা একটি কালজয়ী উপন্যাস। এটি আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রচনা। উপন্যাসটি মানুষের অস্তিত্বের অর্থ-হীনতা, বিচ্ছিন্নতা, এবং অবিবেচনামূলক আচরণের পরিণতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে। একটা ঘটনা আমাকে খুবই ভাবিয়েছে – দেখা যায় যে, ঘটনার যিনি প্রধান চরিত্র তার মা মারা গেছেন। বৃদ্ধাশ্রমের মানুষ তাক খবর দিয়েছেন তার মাকে শেষবারের মত দেখবার ও সৎকারে অংশ নেয়ার জন্য।
মায়ের এই মৃত্যুতে চরিত্রটির মধ্যে তেমন কোনও ভ্রূক্ষেপ দেখা যায় না। তার অনেকটা ধারণা এমন যে, মানুষ মারা যাবে এটাই তো স্বাভাবিক। মা হোক, বাবা হোক, স্ত্রী হোক; সবাই মরে যাবে। এটাকে অনেক আগে মনের মধ্যে গ্রহণ করে নিয়েছে। তাই মায়ের এই মৃত্যু শোক তাঁকে খুব একটা শোকায়িত করতে পারে না। কামুস দেখিয়েছেন যে- যেখানেই এই পুরো পৃথিবীটাই সম্পূর্ণ অর্থহীন ও absurd; সেখানে কেউ একজন মারা গেলে পৃথিবীর কিই’বা আসে যায়।
চরিত্রটি তাই নিজের একান্ত অনিচ্ছায় মায়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসে, এবং সে নিজের ইচ্ছেমত কাজ করে। সে মায়ের কফিনের কাছে নিয়ে মনের ইচ্ছেয় সিগারেট টানে। শেষপর্যন্ত শেষকৃত্যে যোগ না দিয়ে নিজের গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যায়।
অর্থাৎ- কামুস দেখাতে চেয়েছেন যে, যেহেতু পৃথিবীটাই অর্থহীন ও অ্যাবসার্ড; তাই এখানে এমন কিছু করারও কোনও মানে নেই যার খুব গভীর সামাজিক মূল্যবোধ আছে। বরং নিজের মধ্যে সব অসঙ্গতি মেনে নিয়ে নিজেকে সব জায়গায় খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা না করে নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে, নিজের মত করে বাঁচাটাই বরং এই নশ্বর পৃথিবীর একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
কামুসের মতে- মানুষের ফিলোসফিক্যাল যত সমস্যা আছে সব কিছুই খুব ভালো করে দেখলে উত্তর খুঁজে বের করে সমাধান করা সম্ভব। কেবলমাত্র যে একটা দার্শনিক প্রশ্নের উত্তরে মানুষ সঠিক উত্তর খুঁজে পায় না সেটা হলো- সে তার নিজের অস্তিত্ব’কে কীভাবে দেখছে! সে তার নিজের জীবন নিয়ে হ্যাপি? তার কি বেঁচে থাকা উচিত জীবনের সমস্ত তিক্ত সত্য মেনে নাকি তার মরে যাওয়া উচিত। একমাত্র বেঁচে থাকা সঠিক সিদ্ধান্ত নাকি আত্মহত্যা করাই ভালো; সেটাই একমাত্র মুখ্য প্রশ্ন।
“There is only one really serious philosophical problem,” Camus says, “and that is suicide. Deciding whether or not life is worth living is to answer the fundamental question in philosophy. All other questions follow from that” (MS, 3). One might object that suicide is neither a “problem” nor a “question,” but an act.
যাইহোক, জীবন তো অনেক সহজ কিছু না। অনেক কিছুই এখানে পাওয়া, না পাওয়া আর ছাড় দিয়ে চলতে আর মানিয়ে নিতে শিখে নিতে হয়। অনেক খুব একান্ত নিজের জিনিসপত্রও ছেড়ে দিতে হয় এই মহাবিশ্বের মহাকালে। আমি কেবলই ভাবি, আমি শুধু একা নই, আমার মতন আরও অনেকেই গিয়েছেন এইসব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে- তবেই না এসেছে এসব জীবনের দর্শন। তবেই না কামুস ভেবেছেন আর লিখেছেন এসব ফিলোসফি।
২: মিথ অফ সিসিফাস – চূড়ান্ত এবসার্ডিজম
মিথ অফ সিসিফাস কামুসের আরেকটা দারুণ লেখা।
গ্রীক পুরাণে, সিসিফাস ছিলেন কোরিন্থের রাজা। তাকে একটা দুষ্টু এবং প্রতারক রাজা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তিনি তার প্রজাদের উপর অত্যাচার করতেন এবং দেবতাদের সাথে প্রতারণা করতেন। একদিন, তিনি মৃতদের রাজ্য থেকে তার মৃত স্ত্রীর ফিরে আসার জন্য মৃত্যুকে বন্দী করেছিলেন। দেবতারা এই প্রতারণার জন্য সিসিফাসের উপর বিরক্ত হয়েছিলেন এবং তাকে তার পাপের জন্য শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন।
দেবতারা সিসিফাসকে পাতালের নিচে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তাকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় একটি বিশাল পাথর ঠেলে দিতে হয়েছিল। প্রতিবার যখন তিনি পাথরটি চূড়ায় পৌঁছতেন, তখন তা তার নিজের ভারে নিচে গড়িয়ে পড়ত। তাকে অনন্তকাল ধরে এই কাজ করতে হয়েছিল।
সিসিফাসের শাস্তিটিকে প্রায়শই অসম্ভব কাজের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। এটি এমন একটি কাজ যা কখনও শেষ হবে না এবং কোনও অর্থপূর্ণ ফলাফল তৈরি করবে না। সিসিফাসের শাস্তিটিও প্রায়শই অস্তিত্ববাদী দর্শনের সাথে যুক্ত হয়। অস্তিত্ববাদীরা বিশ্বাস করেন যে জীবনের কোন অন্তর্নিহিত অর্থ নেই এবং মানুষকে নিজেরাই অর্থ তৈরি করতে হয়। সিসিফাসের শাস্তিটি এই ধারণার একটি উদাহরণ যে এমনকি অর্থহীন কাজও করতে থাকার অর্থ থাকতে পারে।
এখন আসা যাক এই সাজা তে সিসিফাস হ্যাপি নাকি আন-হ্যাপি। আমি আপনি বাইরে থেকে দেখলে বলতেই পারি- এই একটা পাথরকে গড়িয়ে উপরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে আবার সেটা নিজে নিজে নিচে নেমে আসবে। আবার সেটা সিসিফাস উপরে নিয়ে যাবে, আবার নিচে চলে আসবে; এরচেয়ে মিনিংলেস কাজ তো আর কিছুই হয় না। সিসিফাস নিশ্চয়ই এই কাজে খুব বিরক্ত আর হতাশ, আর সে নিশ্চয়ই এই সাজা পেয়ে মোটেই হ্যাপি নয়।
এখন সিসিফাস হ্যাপি নাকি আন-হ্যাপি সেটা একটু দেখা যাক। এইখানে কামুস লিখেছেন যে –
Each atom of that stone, each mineral flake of that night-filled mountain, in itself, forms a world. The struggle itself toward the heights is enough to fill a man’s heart. One must imagine Sisyphus happy.”
এইখানে কামুস বোঝাতে চেয়েছেন যে – কোনও কাজের শেষ পরিণতি যদি ভুলে যাওয়া যায়; এবং যদি ঐ কাজে যে পরিমাণ স্ট্রাগল বা পরিশ্রম আছে; সেটার দিকে যদি কেউ তাকায়- তবে কেবলমাত্র ঐ সমস্ত পরিশ্রমই একজন মানুষের হৃদয়কে পরিপূর্ণ করে দিতে সক্ষম।
ব্যাপারটা আরেকটু সহজ করা যাক! আমরা যখন কোনও কাজ করি সেটার শেষ পরিনতি’তে যাওয়ার আগেই কিন্তু আমরা একটা সুখানুভূতি পাই। যেমন ধরা যাক, কেউ ২০ তলা বিল্ডিং সিঁড়ি বেয়ে উঠবে। এই যে সে একটা করে ফ্লোর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে- এতে করে প্রত্যেকটা ফ্লোরে গিয়েই অথবা প্রত্যেকটা সিঁড়িতেই সে একটু করে আনন্দ পাচ্ছে। কিসের এই আনন্দ সেটা সে হয়ত জানে না। কিন্তু সে পাচ্ছে।
এখন এই লোকটা ২০ তলা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে হয়ত সে দেখবে কিছুই সেখানে নেই। তবুও- সে যে এত কষ্ট করে, এত স্ট্রাগল করে এত উপরে উঠল; এইটাই তার হৃদয়ে কিছুটা পূর্ণতা এনে দেবে।
তাই কামুস বলেছেন – The struggle itself toward the heights is enough to fill a man’s heart. One must imagine Sisyphus happy.”
আলবেয়ার কামুস তার “মিথ অফ সিসিফাস” প্রবন্ধে সিসিফাসের শাস্তির একটি বিখ্যাত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কামু যুক্তি দেন যে সিসিফাস তার শাস্তির প্রতি হতাশ হওয়ার পরিবর্তে, তিনি এটিকে একটি অর্থপূর্ণ কাজ হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন। তিনি পাথরটিকে চূড়ায় ঠেলে দেওয়ার কাজটিকে একটি শিল্প হিসাবে দেখতে পারেন, বা এটিকে তার স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে দেখতে পারেন। কামুসের মতে, সিসিফাস তার শাস্তির মাধ্যমে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে পারেন।
সিসিফাসের শাস্তি একটি জটিল এবং বহুমুখী প্রতীক। এটি অসম্ভব কাজের প্রতীক, অস্তিত্ববাদী দর্শনের একটি উদাহরণ এবং জীবনের অর্থের সন্ধান।
শেষ করছি- তবে আমরা যদি আমাদের জীবনের দিকে তাকাই- আমাদের নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরাও তো সিসিফাসের মতন একই সাজা খেটে যাচ্ছি, আর একই মিনিংলেস কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ঘুমাচ্ছি, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি। আবার বাসায় এসে ঘুম। এই একই আবর্তে আমরাও আটকে নেই কি!
সিসিফাস সকাল টু সন্ধ্যা একটা পাথরকে গড়িয়ে উপরে নিয়ে যেত- আবার সেই পাথরটা নিজের ইচ্ছায় নিচে নেমে আসতো। আমরাও আলাদা কিছু করছি না, সকালে উঠে কাজে যাচ্ছি, একটা বড়সড় পাথরের মত কিছু একটা গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রাতে এসে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছি- আবার সেই পরেরদিন সকালে উঠে একই পাথর আবার গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
এখন তাহলে আমরা কি হ্যাপি না? আমরা কি আন-হ্যাপি? উত্তর হ্যাঁ অথবা না। বিশাল অর্থে দেখলে আমরা আন-হ্যাপি। কারণ এই কোনও কিছুরই কোনও অর্থ নেই। আবার এই যে জীবনের জগদ্দল পাথর ঠেলতে ঠেলতে আমাদের হৃদয়ে একটু প্রেম আসছে, অনেকটা বিষাদ আসছে, অনেকটা সুখ অসুখ অনেক কিছুই আসছে। এসবই আমাদের হ্যাপি রাখছে, বাঁচিয়ে রাখছে।
তাহলে কি ভাববো? সিসিফাস হ্যাপি?
আদতে সে যাইহোক, One must imagine Sisyphus happy.”
প্রায় শেষ করে ফেলেছি লেখাটা এই আনন্দে আমি আনন্দিত! কী জানি আমার ভেতরের সিসিফাস হয়ত এতেই হ্যাপি। যাইহোক, এই দুইটা বই নিয়ে কথা বলতে গেলে অবিচ্ছেদ্যভাবেই চলে আসে স্যামুয়েল ব্যাকেটএর ওয়েটিং ফর গডো এর কথা।
আমরা অনন্তকাল ধরে গডো এর জন্য অপেক্ষা করি। গডো আসবে, সে আমাদের সকল দুঃখ ঘুচিয়ে দেবে। সে আমাদের সব কথা মন দিয়ে শুনবে —-
“The tears of the world are a constant quantity. For each one who begins to weep somewhere else another stops. The same is true of the laugh.”
― Samuel Beckett, Waiting for Godot
——————————————-
জাহিদ অনিক
৩১ শে জানুয়ারি, ২০২৪
এই লেখাটা পিডিএফ হিসেবে পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুণ –
ঘুমাচ্ছি, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাজে যাচ্ছি। আবার বাসায় এসে ঘুম। এই একই আবর্তে আমরাও আটকে নেই কি!!
এই যে দায়বদ্ধতা, এর থেকে বেরিয়ে আসা কি আমার ব্যক্তির দায়বদ্ধতা??
নাকি সামাজিক জীব হিসেবে কিংবা জীবিকার তাগিতে এই চক্রে আমরাই নিজেদেরকে ঠেলে দিই?
যদি নিজেকে নিজেরাই এই চক্রে ঠেলে দিই, তাহলে তা এড়িয়ে যাওয়ার সুজুগ টা কোথায়, যখন আপনার উপর আরো হাজারতা দায়বদ্ধতা এসে দাঁড়াবে কেবল মাত্র আবারো বলছি কেবল মাত্র আপনি সামাজিক জীব হিসেবে?
হিমেল, অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। প্রথমেই কৃতজ্ঞতা ও বিস্ময় প্রকাশ করছি। কোনোভাবেই আশা করি নি যে আমার ওয়েবসাইট লেখায় মন্তব্য আসবে।
তাও আবার এত সুন্দর মন্তব্য।
এখন আপনার মন্তব্যের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক! আমরা নিজেরা নিজেদেরকে এই দায়বদ্ধতার কাছে ঠেলে দেই কিনা, বা এর থেকে আসলেই কোনও উত্তরণ আছে কিনা, যদি থাকে তবে কেন মানুষ হাজার বছর ধরে এই চক্রাকারে ঘুরে যাচ্ছে এই প্রশ্ন আসে মনে, তাই না?
এখন খুব জটিল করে না ভাবলে একটু সহজ করে ভাবলে- মানুষের এই অর্থহীন আর চক্রাকারে জীবনে ঘুরে যেতে কোনো সমস্যা নেই যতক্ষণ পর্যন্ত সে এই জীবনের ঘানি টা বয়ে যেতেই আনন্দ পাচ্ছে। আপনি দেখবেন মানুষ কিন্তু অনেক সময় পরিশ্রম করে কোনো ফলাফল না পেয়েও আনন্দ পায়। যাইহোক, সব সময় মানুষ তার কাজে আনন্দ পাবে এমন টা না। মানুষ তো আমরা তাই খেই হারিয়ে ফেলি, অনেক কাজ করি। যার কোনো অর্থ নেই হয়ত। এইসব হাজারটা অর্থহীন কাজ করতে করতেই, হাজার ভাবে ভাবতে ভাবতেই, হাজারটা দুঃখ পেয়েই মানুষ নিজের জীবনকে বুঝতে পারে। কেউ অল্প সময়ে পারে। কেউবা সারাজীবন চেষ্টা করেও পারে না। কিন্তু মানুষ মোটামুটি সবাই একটা পর্যায়ে এসে নিজের জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝে যায়, সেটা যে মহৎ কিছু হতেই হবে এমন না। খুব সাধারণ জীবনও অনেক সময় আরাধ্য হয়।
তাই আপনার প্রশ্নের খুব ছোট্ট করে উত্তর দিলে-
আমরা এই চক্রে নিজেদের ফেলে দেই কিনা, হ্যাঁ দেই। না বুঝেই দেই, পরে যখন বুঝতে পারি, তখন এই যে না বুঝে যে চক্রে পড়ে গিয়েছি- সেই চক্রটাকে নিজেদের মতন একটু আঁকাবাঁকা করে নিয়ে নিজের মতন করে মডিফাই করে নিয়ে চলতে হয়।
তখন আর এসবকিছু মিনিংলেস লাগে না,বা মনে হয় না যে চক্রে আমরাই নিকেদের ঠেলে দিই।