উডি অ্যালান, হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ‘ইর‍্যাশনাল ম্যান’: অস্তিত্ববাদী পাগলামি ও অন্ধকারের গল্প
Woody Allen, Joaquin Phoenix, and Emma Stone’s ‘Irrational Man’: A Tale of Existential Madness and Darkness

হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ইর‍্যাশনাল ম্যান 
Joaquin Phoenix, and Emma Stone's Irrational Man

এব লুকাস, ফিলোসফির এক মধ্যবয়স্ক প্রফেসর, যাকে দেখে মনে হবে জীবনটা যেন শুধু কিয়েয়ারকার্ড আর ডোস্তয়েভস্কির বই নিয়ে বসে থাকার জন্যই। একা একা থাকেন, বিয়ে শাদি করেন নাই। পড়াশোনা, লাইফ নিয়ে গবেষণা আর ফিলোসফি নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার লাইফ আগায়। জীবনের ওপর এমনই বিরক্ত যে ছাত্রছাত্রীদের পার্টিতে গিয়ে রাশান রুলেট খেলে আর হাসিমুখে বলে, “এটাই তো আসল অস্তিত্ববাদ—জীবন-মৃত্যুর মাঝের সীমান্তটা ছুঁয়ে দেখো!”

ভাবুন একবার, কারো পার্টি চলতে চলতেই প্রফেসর পিস্তল হাতে বসে গেছে আর বলে, “লেটস প্লে দ্য গেম অফ লাইফ!” এমন পাগলামি দেখে কেউ ভ্যাবাচ্যাকা খায়, কেউ মুগ্ধ হয়, আর জিল? সে তো একেবারে প্রেমে পড়ে যায়।

বলে রাখা উচিত জিল তার ছাত্রী, যে কিনা তার গবেষণা, পাণ্ডিত্যে এবং এই যে প্রফেসর একা একা থাকে এতে কিছুটা সহানুভূতিশীল হয়ে কিছুটা প্রেমে পড়ে প্রফেসরের।

হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ইর‍্যাশনাল ম্যান 
Joaquin Phoenix, and Emma Stone's Irrational Man

জিল, বুদ্ধিমতী আর খানিকটা রোমান্টিক, সে ভাবে, “আহা, এমন এক প্রফেসর, যার মনের গভীরতা টাইটানিকের ডুবন্ত অংশের থেকেও গভীর!” কিন্তু এব? সে তো প্রেমের ব্যাপারে বলে, “এসব অনুভূতি তো শুধু দার্শনিক বইয়ের পাতা জমে থাকুক।” তবুও, মানুষের মনের শূন্যতা মাঝে মাঝে এমন হয়, যা একটু আদর-টাদর খোঁজে। জিলকে মাঝে মাঝে একটু চুমু-টুমু খায় আর ভাবে, “এত ভালো ছাত্রীর মন ভাঙা উচিত না।” ব্যাপারটা ভালোই চলে, জিল তার বয়ফ্রেন্ডকে ডিচ করে প্রফেসরের সাথে ডুবে ডুবে জল খায়, মদও খায়, চুমুও খায়।

কাহানি আগাতে থাকে কিছুটা ধীরে ধীরে, লিটারেচার আর ফিলোসফির মতই স্লো। প্রফেসর এব লুকাস এবার ঠিক করে, জীবনটা “অর্থপূর্ণ” করার একটা কাজ তাকে করতেই হবে। তার প্ল্যান? স্থানীয় এক দুর্নীতিবাজ বিচারককে মেরে ফেলা। তার কথায়, “একজন মানুষের জীবন শেষ করলেও যদি সমাজে ন্যায়ের উদাহরণ তৈরি হয়, তবে তা সার্থক।” বিচারককে মেরে ফেলার জন্য প্রফেসর নিজের সাথে নিজে নানা প্রকার উদ্ভট ফিলোসফি কপচাতে থাকে; নিজেকে জাস্টিফাই করার জন্য। ওনার এসব এই ফিলোসফির যুক্তি শুনে কিয়েয়ারকার্ড নিজেই যদি কবর থেকে উঠে আসতেন, বলতেন, “ভাই, একটু দম নেন!”

হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ইর‍্যাশনাল ম্যান 
Joaquin Phoenix, and Emma Stone's Irrational Man

একদিন জিল প্রফেসরের ঘরে যায়, সেখানে কেউ ছিল না। জিল প্রফেসরের ঘরে হাতের লেখা নোট সহ দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’ বইটা দেখতে পায়। এটা দেখে সে কিছুটা বুঝতে পারে যে, বিচারককে হত্যা হয়ত অধ্যাপক নিজেই করেছেন।

ঘটনা এগোতে থাকে। এবের নানা কাজে জিল বুঝতে পারে, প্রেম, ফিলোসফি, আর পাগলামি তিনটে মিললে মানুষ খুব সহজেই নিজের জীবন এলোমেলো করে ফেলে। আর এই পুরো ঝামেলায়, জিলের নিজস্ব চিন্তাভাবনারও বড় পরিবর্তন হয়।

হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ইর‍্যাশনাল ম্যান 
Joaquin Phoenix, and Emma Stone's Irrational Man

শেষমেশ, এক ক্লাইম্যাক্সের মুহূর্তে, প্রফেসর এব লুকাস তার বড় ফিলোসফি প্রজেক্টের ফাঁদে নিজেই আটকা পড়ে। এটা অনেক পরে জিল যখন বুঝতে পারে, এবের জীবন শুধু চিন্তার গভীরতায় ভরা নয়, বরং তার নিজের অন্ধকারও আছে, তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেকে বাঁচানোর।

জিল ধীরে ধীরে প্রফেসরের পরিবর্তন টের পায়। প্রেমের রোমাঞ্চের বদলে সে দেখতে পায় একধরনের অন্ধকার, যেখানে নৈতিকতা আর আদর্শের লড়াই চলছে। শেষমেশ, এক ভয়ঙ্কর সত্য আবিষ্কার করে, যে এব লুকাস শুধু বিচারককেই নয়, নিজের পরিকল্পনার গোপনীয়তা বজায় রাখতে জিলকেও সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছে।

জীবনে চিন্তা আর ফিলোসফি জরুরি, কিন্তু সেটা নিয়ে বেশি ভাবলে সায়ানাইড আর রাশান রুলেট হাতে নাও নিতে পারে! তাই, অস্তিত্বের অর্থ খুঁজতে গেলে, একটা ভালো কফি বানাও, উইন্ডো থেকে বাইরের আকাশ দেখো, আর ভাবো, “জীবন তো আসলে একটা ছোট গল্প, সেটা সিরিয়াস করে লাভ নেই!”

মূল গল্প এইই- এবার একটু অন্যদিকে কথা বলা যাক!

গল্পের শুরু ২০১৫ সালের একটি আমেরিকান লিবারাল আর্টস কলেজে, ছোট্ট শহরের এক সবুজ-ঘেরা ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের গভীর তর্ক-বিতর্ক, কফি শপে বসে দার্শনিক আলোচনা, আর সন্ধ্যার পার্টির গুঞ্জন—সব মিলিয়ে এটি এমন এক জায়গা যেখানে চিন্তা আর অনুভূতির মেলবন্ধন ঘটে।

গল্পটি গভীর, তবে খুবই সহজ ও অনুমেয়; প্রফেসর এবের সিদ্ধান্ত আর কাজগুলো দর্শকের কাছে নাটকীয় হলেও কখনো কখনো তাড়াহুড়ো মনে হয়। বিশেষত, জিলের চরিত্রটি আরও জোরালো হতে পারত। তার পরিবর্তন আর আবেগের গভীরতা সেভাবে ফুটে ওঠেনি। প্লটের কিছু জায়গা এতটাই সরল যে, তা দর্শকের কৌতূহলকে পূর্ণভাবে ধরে রাখতে পারে না।

তবে সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ। ক্যাম্পাসের দৃশ্যগুলোতে একধরনের শান্ত সৌন্দর্য, যা এবের মনস্তাত্ত্বিক অস্থিরতার বিপরীতে দাঁড়ায়। বিচারকের হত্যার পরের পরিবেশ, জিলের ভয় এবং এবের নিজস্ব চিন্তার দ্বন্দ্ব—সবকিছু ক্যামেরায় নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে।

হোয়াকিন ফিনিক্স আর এমা স্টোন এর- ইর‍্যাশনাল ম্যান 
Joaquin Phoenix, and Emma Stone's Irrational Man

প্রফেসর এব লুকাসের চরিত্রে, হোয়াকিন ফিনিক্স আর ছাত্রী জিলের চরিত্রে- এমা স্টোন একটা স্লো মুডে বলা গল্পকে বেশ ভালোই টেনে নিয়ে গেছে; অন্তত দেখা ছেড়ে উঠে তো যাইনি দেড় ঘন্টার উপরের মুভিটা।

ডিরেক্টর  উডি অ্যালানের এই ‘ইর‍্যাশনাল ম্যান’ সিনেমাটি ওই সময়ের এমা স্টোনের ক্যারিয়ারে অন্যতম মুভি হলেও, হোয়াকিন ফিনিক্স এর চেয়ে ভালো অনেক কাজ করেছেন।

২২শে ডিসেম্বর ২০২৪
জার্নাল অফ জাহিদ

By Journal Of Jahid

Hello Good People, Welcome to the Journal Of Jahid. Here, I will keep uploading here my wandering thoughts. Thanks for being here. You can directly mail me at jahid@journalofjahid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *