ফ্রান্স কাফকা একজন জগত বিখ্যাত লেখক, উনি মূলত অনেক রচনা লিখলেও কেবলমাত্র একটা নভেলার জন্য কাফকা অনেক বেশি বিখ্যাত। আমরা আজকে কাফকার যে গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করব, সেটা হচ্ছে ‘মেটামরফোসিস’। মেটামরফোসিস শব্দের অর্থ রূপান্তর। একটু বলে রাখি, কোনও লেখার শব্দ সংখ্যা যদি ২০,০০০ থেকে ৪৯,৯৯৯ এর মধ্যে থাকে তাহলে সেটাকে ছোট আকারে বলা হয় নভেলা আর ৫০ হাজার এর বেশি শব্দের লিটারেচারকে বলা হয়ে থাকে নভেল।

মেটামরফোসিস বাংলা রিভিউ

বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা আছে কিন্তু ফ্রাঞ্জ কাফকার নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বনন্দিত এই সাহিত্যিক খুব বেশি দিন বাঁচতে পারেননি। তার সাহিত্যকর্মের ঝুলিও খুব বেশি বড় নয়। কিন্তু তার লেখাগুলো অসাধারণত্ব অর্জন করেছে, বিশেষ করে তার ছোটগল্পগুলো। ‘মেটামরফোসিস’ তার ঠিক সেরকমই একটি ছোটগল্প। অবশ্য একে উপন্যাসিকা বললেও ভুল হবে না।

এই বইটি কাফকা যখন লিখেন তখন কাফকার বয়স ৩২/৩৩ বছর, এবং একটা ঋণগ্রস্ত জীবনের সাথে জড়িত। কাফকার এই মেটামরফোসিস বইটিতে একজন মধ্য-বয়সী যুবক ও একটা পরিবারের ট্রান্সফরমেশন বা রূপান্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কাফকার এই বইটিতে এত ডায়নামিক লেয়ার আর এত ভালো ভাবে সবগুলো স্তরের বর্ণনা করেছেন যে কেউ একবার পড়তে বসলে সেটা শেষ না করে উঠতে পারবেন না। এমনিতেই বইটি খুব ছোট ১২০ পৃষ্ঠার মতন এবং প্রত্যেকটা স্তরের বর্ণনাই এতটা সাবলীল যা পাঠককে আঁকড়ে ধরবে।

মেটামরফোসিস, বইয়ের শুরুটা হয় এভাবে-

গ্রেগর স্যামসা নামের একজন যুবক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন যে তার দেহ মানুকের আকৃতি থেকে পরিবর্তিত হয়ে একটা বিশাল বড় কীট বা পতঙ্গের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে অর্থাৎ মেটামরফোজড হয়ে গেছে। এখন একজন সাধারণত মানুষ যদি এরকম অবস্থায় পড়ে, তবে তার মাথায় আগে সবার আগেই আসবে এটা যে, – আমি কীভাবে মানুষ থেকে কীট বা পতঙ্গের আকৃতিতে চলে এলাম?

অথচ কাফকা এই বইতে চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন যে, গ্রেগর এসব কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না। তার চিন্তা ছিল কেবল এটাই যে, সে তার অফিসে যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তার বস থাকে বকা দেবে অথবা সে চাকরি হারাবে।

এইখানে কাফকা খুব নিপুণভাবে দেখেছিয়েন আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক কীভাবে মানুষ থেকে রূপান্তরিত হয়ে কেমন একটা যন্ত্র বা মেশিন হয়ে গেছে। যার নিজের দেহ কীট/ পতঙ্গের মত হয়ে গেছে কিন্তু সে ভাবছে তার চাকরি নিয়ে! আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আসলে কি জীবনের জন্য চাকরি নাকি চাকিরিই জীবন এটা কাফকা খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন এই বইতে।

গ্রেগর সামসা পতঙ্গে রূপান্তরিত হওয়ার পর সবকিছুতেই প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল। তাকে সাহায্য করার মতো মানুষের ভূমিকা পালন করছিলো শুধু তার বোন, আর কেউ নয়। তার বোন তার রুমে ঢুকত, খাবার দিতো। তবে সেও পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো, এমনটা নয়। চুপচাপ খাবার দিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যেতো। বিপদের সময় গুটিকয়েক মানুষকেই পাশে পাওয়া যায়, সবাইকে নয়।

এরকম আরও অনেকগুলো প্রেক্ষাপট ও আখ্যান নিয়ে এই বইটি কেবলমাত্র একজন মানুষের দৈহিক রূপান্তরকেই বুঝায় না। দৈহিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানসিক ও সামাজিক রূপান্তরকেও দেখানো হয়েছে খুব চমৎকার করে।

মেটামরফোসিস এই বইটিতে একটা পর্যায়ে এসে গ্রেগর স্যামসা নিজের রুমের দরজা খুলে বাইরে আসে। তখন গ্রেগরের এই বিকট, বিচ্ছিরি, আর অদ্ভুতভাবে মানুষ থেকে কীট পতঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া থেকে তার বাবা মা ও বোন সবাই খুব বাজে-ভাবে ব্যবহার করে গ্রেগরের সাথে। বলে রাখা ভালো, এই বইতে কাফকা কখনো নির্দিষ্ট করে বলেন নি যে কেন গ্রেগর এইভাবে মানুষ থেকে কীটে রূপান্তরিত হলো। এটা নির্দিষ্ট করে না দিয়ে অবশ্য ভালোই করেছেন, কেননা এই বইটা যে’ই পড়তে যাবেন তিনি নিজেই একটা কারণ নিজের মস্তিষ্কের মধ্যে অটোম্যাটিক তৈরি করে নিবেন। আমার কাছে এই ছোট্ট খেলাটা ভালোই লাগে।

গল্পের শেষটা হয় আরও নির্মমভাবে। গ্রেগর সামসা মারা যায়। তার মৃত্যুতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে তার পরিবার। কারণ সামসা’র জন্য তাদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। প্রতিবেশীরা যেন না দেখে সেই ভয়ে থাকতে হবে না। বাসায় কোনো ঝঞ্ঝাট ছাড়াই থাকতে পারবে তারা।

পুঁজিবাদী সমাজ কতটা নির্মম হয়ে ওঠে একজন অক্ষম শ্রমিকের জন্য, তার একটি সার্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে মেটামরফোসিস গল্পে। কেউই পক্ষে থাকে না সেই অভাগা শ্রমিকের। সমাজ, পরিবার, অফিস– কেউ না। সেই সমাজ শুধু টাকা চেনে, মুনাফা চেনে। শ্রমিকের অসহায়ত্ব চেনে না। শ্রমিকের সামাজিক পরিস্থিতি বোঝে না।

গল্পের শুরুটা যেই অদ্ভুত রূপান্তরের মাধ্যমে, তার পরবর্তী ঘটনা যেন তারই ফলাফল। গল্পের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ সামসা’র বিড়ম্বনাকে ঘিরে। আর এসব বিড়ম্বনার আড়ালে কাফকা তুলে এনেছেন পুঁজিবাদী সমাজের নির্মম বাস্তবতাকে।

Audio Book URL:

https://soundcloud.com/loretta-cosgrove-1/sets/metamorphosis

এই সম্পূর্ণ বুক রিভিউটি নিয়ে আমার বুক-রিভিউঃ Metamorphosis by Franz Kafka Review In Bengali | মেটামরফোসিস বাংলা রিভিউ দেখতে চাইলে নিচের ইউটিউব ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ।

By Journal Of Jahid

Hello Good People, Welcome to the Journal Of Jahid. Here, I will keep uploading here my wandering thoughts. Thanks for being here. You can directly mail me at jahid@journalofjahid.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *