তুমি কবিতা পড়ো, বুঝতে পারো – কবিতার শব্দ আর লাইন পড়ে ভাবতে বসো হয়ত তোমার নিজের পৃথিবীর কথা। তুমি যেখানে কবিতার শব্দের পড়ো; আর আমি কবিতায় বাঁচি। কেউ কখনো কেবলমাত্র একটা শব্দ পছন্দ করেছে বলেই কিনে নিয়েছে আমার গোটা প্রকাশিত অপ্রকাশিত রচনাসমগ্র। আমি তাই অপেক্ষা করব উপযুক্ত শব্দের জন্য আজীবন। কোনও বেখাপ্পা শব্দ আমি ঠেসে ধরে বসিয়ে দেব না আমার কবিতায়।
আমার কবিতা ততটা শুদ্ধ যতটা আপনার হৃদয় শুদ্ধ; আমার কবিতা ততটা পবিত্র যতটা রয়েছে অন্তরে আপনার ঈমান। কেবলমাত্র কবিতা লিখি কারণ – এ হৃদয় জানে না তুষ্টি – জানে না পোষ মানা।
কেউ কেউ এক দু’বার জিজ্ঞেস করেছেন আমাকে কেন আমি কবিতার বই বের করছি না। আসলে- আমার জন্য কবিতার বই বের করা আর কারও প্রেমে পড়ে তাকে জানানো একই রকম বিব্রতকর। কারও প্রেমে পড়লে তাকে সেটা বুঝতে দেয়া আর মুখ ফুটে জানানো যেমন কী ভীষণ লজ্জার আর তীব্র নির্লজ্জ ও বেহায়ার মতন; সেরকমই অনেকটা। যেমন পারবো না নিজের লেখা নিয়ে প্রকাশকদের কাছে গিয়ে গিয়ে বিনয় ভরে বলতে যে, ভাই দেখেন লেখাগুলো কিছু করা যায় কিনা! তেমনি পারবো না এ হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা কোনও নারীকে গিয়ে বোঝাতে।
মূলত দুঃখ, নিরেট দুঃখবোধ না এলে পৃথিবীই বোধয় অচল হয়ে যেত। একটু চিন্তা করলে দেখা যায় যে- সুখবোধ থেকে কোনও নতুন ভাবনা অথবা নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ভাবনার উদ্রেক হয় না। ভাবুন তো পৃথিবীর সকল মানুষ একদম সুখী আছে; যেখানে আছে- সবাই নিজ নিজ অবস্থানে সুখী। তাহলে হয়ত কেউ কোনও কাজ করত না। কেউ আর যন্ত্রণা উপলব্ধি না করলে কেউ কোনও নতুন শব্দ ভাবত না। কেউ কোনও কবিতা লিখত না, বই ছাপানো হত না; বের হতো না কোনও ছায়াছবি, বের হত না কোনও আমূল পালতে দেয়া বানী। কখনো কখনো তাই ভাবি- সৃষ্টিশীল হওয়ার পেছনে গভীর ও সূক্ষ্ম দুঃখবোধ থাকাটা নিয়ামক নয়, বরং একান্ত জরুরী। কিছু একটা যন্ত্রণা বোধয় পুষে রাখতে হয় বুকের মধ্যে।
আবার ভাবি- এই যে তবে আমাদের মহাবিশ্ব; এই যে সৃষ্টি – এও কি তবে স্রষ্টার কোনও এক তীব্র যন্ত্রণার ফল!
যাইহোক, ফিরে আসি কবিতার কথায়। কবিতা লিখতে লিখতে এক সময় কবিতা হয়ত সর্বজনীন হয়ে যায়। কবিতা সর্বজনীন হলে কবিতা বেঁচে থাকে; কবি সর্বজনীন হয়ে গেলে কবির মৃত্যু হয়। কবিকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় অতি গোপনে, সঙ্গোপনে।